বান্ধবীদের সাথে চিঠি দিয়ে
যোগাযোগ করতাম। চিঠি পাঠাতাম
আমার এক বন্ধুর ঠিকানায়। ঐ সব
চিঠি বান্ধবীদের কাছে
পৌছাইয়া দিত। তখন আমাদের
এলাকায় মোবাইলে ভাল
নেটওয়ার্ক পাওয়া যেতনা। যে
এক-দুইজনের মোবাইল ছিল তারা
গাছের মগডালে উঠে নেটওয়ার্ক
খুজত।
একবার হলো কি আমি একটা চিঠি
পাঠাইলাম ঐ বন্ধুর ঠিকানায়।
আগে থেকেই হিসেব করে রাখতাম
চিঠি কবে গিয়ে পৌছাবে। তো
যেদিন চিঠি পৌছানোর কথা তার
আগের দিন সন্ধায় আমার বন্ধু
ঢাকা এসে ফোন করল আমিতো ঢাকা।
মাথায় যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে
বাড়ি মারল। এলাকায় আমার যে
শত্রু কার হাতে না কার হাতে
পড়ে যায়। আর শালার পিয়নও
হইলো এলাকার। তাছাড়া চিঠি
যদি ঐ বন্ধুকে না পেয়ে তার
বাসায় রেখে আসে। খুব ভয়
পাইলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম
রাত্রেই বাড়িতে যাব। মহাখালী
থেকে ময়মনসিংহের বাস পেলাম।
ময়মনসিংহ যেতে যেতে রাত ১টা।
হালুয়াঘাটের কোন বাস না
পেয়ে শেষে হালুয়াঘাটগামী
একটি ট্রাকে উঠে পড়লাম।
যখন নাগলা নামলাম তখন রাত দুইটা।
কোন রিক্সা নাই। একটি দোকান
খোলা পেয়ে এক প্যাকেট বেনসন
আর একটা ম্যাচ নিয়ে হেটেই রওনা
হলাম। ঐ খান থেকে আমার বাসা ১৫
কি.মি.। তার মাঝে ৫ কি.মি. পাকা
রাস্তা, বাকী১০ কি.মি. কাচা
রাস্তা। হঠাৎ একটি রিক্সা দেখে
পুলকিত হলাম। কিন্তু
রিক্সাওয়ালা শুধু পাকা
রাস্তাটি যেতে রাজি হলো।
কাঁচা রাস্তায় অনেক কাঁদা
তাই যাবেনা। আমি পাকা
রাস্তাটি ১০ টাকা দিয়ে
গেলাম। তারপর প্যান্ট উল্টিয়ে
হাটু পর্যন্ত তুলে রওনা হলাম।
মাঝে মাঝেই চাঁদটা মেঘের
আড়ালে ঢাকা পড়ছে। তখন
চারদিকে অন্ধকার হয়ে যায়। মনে
হচ্ছে এই বুঝি চাঁদটাকে কোন
দৈত্য তাড়িয়ে নিয়ে গেছে।
পাশের ধানক্ষেত থেকে একটি
ব্যাঙ থেমে থেমে করুন সুরে
ডেকে যাচ্ছে। বুঝতে পাড়লাম
হয়তো কোন সাপ ঐ ব্যাঙটিকে
ধরেছে।
আমি হেটেই চলছি। আমাকে যে
সকালেই বাজারে পৌছাতে হবে।
মাঝে মাঝে সিগারেট ধরিয়ে এক-
দুইটা ফুক দিচ্ছি। আসলে
সিগারেট খাওয়ার চেয়ে হাতে
সিগারেটের আগুন রাখাই মূখ্য
উদ্দেশ্য। দূর থেকে দুটি শেয়াল
দেখতে পেলাম। আমাকে দেখে যেন
অবাক হয়ে গেছে। কাছে যেতেই এক
দৌড়ে পাশের ধানক্ষেতে
মিলিয়ে গেল।
আমদের ইউনিয়নে ঢুকে পড়লাম। আর
মাত্র সাড়ে চার কি.মি.।
আকাশের চাদটা মাঝে মাঝেই উকি
দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। যেন
আমার সাথে লুকোচুরি খেলছে, আর
তারাগুলো যেন মিটিমিটি করে
হাসছে।
পেশাবের খুব চাপ দিল। ভাবলাম
ব্রীজটার উপরে উঠেই...। হাতের
সিগারেট টা এইমাত্র শেষ হয়েছে।
আমি ব্রীজের উপরে দাড়ানো।
হঠাৎ....হঠাৎ.... ব্রীজের নিচ থেকে
একটি মেয়ের হাসি শোনা গেল।
আমিতো অবাক। ভাবলাম নিশ্চয়
কেউ ঐখানে........। এইভেবে চিন্তা
করলাম দেখি আসি কে ঐখানে........।
তখনই মনে পড়ল আরে এখন না
বর্ষাকাল। ব্রীজের নিচেতো
পানি। সাথে সাথেই কি যেন
পায়ের তলা দিয়ে সোজা
মাথায় উঠে গেল। চিনচিন করে
মাথাটা ব্যাথাটা করছে। আমি যখন
খুব ভয় পায় তখন আমার ঐ রকম
লাগে। আমি ব্রীজ থেকে নেমে
সোজা হাটা শুরু করলাম।
- দাঁড়াও
পিছনে তাকিয়ে দেখি ঠিক
ব্রীজের মাঝখানে একটি সাদা
শাড়ীপড়া যুবতী মেয়ে
দাড়ানো আছে।
-আমাকে তুমি চিননা
চমকে উঠলাম দেখি অর্পনা। ভাল
করে তাকালাম। এখন কিন্তু আর
অর্পনা মনে হচ্ছেনা। অর্পনার
কথা খুব মনে পড়ে গেল।
-আমি বললাম না চিনিনা।
-তুমি আমারে লইয়া যাও।
-আমি আপনাকে কোথায় নিয়া
যাব
ভয়ংকর ভয়ংকর সে চিৎকার। যেন
কানের পর্দা ছিড়ে যাবে। আমি
দৌড়দিলাম। চিৎকার যেন বেড়েই
চলছে। পানিতে ঝাপ দেওয়ার শব্দ
শুনা গেল। আমি পিছনে তাকাবার
সাহস পেলাম না। সামনে বাতি আর
মানুষ দেখতে পেয়ে থেমে
গেলাম।
-কি হয়েছে চিয়ারম্যানের পুত।
আমি সব খুলে বললাম। সাথে এও
বললাম আমি তো আর একলা একলা
বাসায় যেতে পারবনা।
তারপর তারা সবাই মিলে আমাকে
বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে
আসল। আমি আব্বা-আম্মাকে কিছু
বলতে নিষেধ করলাম।
Post a Comment