ডা. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান খান :: সারা বিশ্বে যতো
মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার শতকরা ১২ ভাগ ঘটে ক্যান্সারের কারণে। উন্নত ও
উন্নয়নশীল দেশসমূহে ক্যান্সারকে যথাক্রমে মৃত্যুর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কারণ
হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্যান্সার হলে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের কোষ
অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে চারপাশের টিসু এমনকি দূরবর্তী কোনো
অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। পরিণতিতে আক্রান্ত
ব্যক্তি এক পর্যায়ে মৃত্যুবরণ করে। আমাদের দেশে স্তন, জরায়ু, অন্ত্রনালী,
প্রোস্টেট, ফুসফুস, পাকস্থলি, ডিম্বাশয়, যকৃত, অন্ননালী, মুখগহ্বর, ত্বক
প্রভৃতি অঙ্গের ক্যান্সার প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়। ক্যান্সারের কারণ হিসেবে
পান-সুপারি, জর্দা, তামাকপাতা, ধূমপান, মদ্যপান, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ,
ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শ, কিছু কিছু ভাইরাস (হেপাটাইটিস বি ও
সি, এইচআইভি, এবস্টেইন বার ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস), কিছু পরজীবী
(সিস্টোসোমিয়াসিস), সূর্য কিরণ, তেজষ্ক্রিয়তা, কীটনাশক, রঙিন খাবার,
বায়ুদূষণ প্রভৃতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়ে থাকে ওপরের কারণগুলো
প্রতিহত করতে পারলে তিন ভাগের একভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ক্যান্সার প্রতিরোধে নিচের টিপসগুলো মেনে চলা জরুরি :
১. পান-সুপারি, জর্দা, তামাকপাতা, ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করা।
২. ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
৩. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম করে শরীরকে সচল রাখা।
৪. সকল ধরনের তেজষ্ক্রিয়তা এড়িয়ে চলা।
৫. পেশাগত কারণে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকলে প্রয়োজনীয় প্রটেকশন নিয়ে কাজ করা।
৬. সময়মতো টিকা গ্রহণ করা (যেমনÑ ‘হেপাটাইটিস বি’ টিকা লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে)।
৭. রঙিন খাদ্য ও পানীয়, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ এবং ভেজাল বা
নিম্নমানের কসমেটিক বর্জন করা। সর্বোপরি খাদ্য, ওষুধ ও কসমেটিক ব্যবহারে
সতর্কতা অবলম্বন করা।
৮. পর্যাপ্ত উদ্ভিজ্জ খাবার (শাকসবজি, ফলমূল) এবং আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
৯. খাবারে অতিরিক্ত লবণ বর্জন করা।
১০. বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা বা এড়িয়ে চলা।
১১. যে সমস্ত অসুখ থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেগুলোর দ্রুত চিকিৎসা করানো।
১২. ধূমপান ও মাদকবিরোধী আইন মেনে চলা অথবা বাস্তবায়ন করা।
১৩. ক্যান্সারের কারণ, প্রতিরোধ, দ্রুত ক্যান্সার নির্ণয় এবং
ক্যান্সারের পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি
করা।
১৪. দ্রুত ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করা।
১৫. জরায়ু, স্তন, ফুসফুস, মুখ, পাকস্থলি প্রভৃতি ক্যান্সারের জন্য স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালু করা।
No comments:
Post a Comment