অসমাপ্ত ভালবাসা
রেখে চলে যাচ্ছে।
-কই দেখি?
বলে ফোনটা হাতে নিলেন মিসেস ইশিতা।
ভাবছে লোক টাকে ডাক দিবে কিন্তু ডাকল না।
“যাক গে, উনার ফোন উনিই নিবেন। ”
কিছুক্ষন পর ভদ্র লোকের ফোনে একটা কল আসল।ফোন টা রিসিভ করলেন মিসেস ইশিতা।
– হ্যালো স্লামালাইকুম,
-হ্যালো ফোন টা আমার,
আমি শপিং মলে ফেলে রেখে এসেছি।
আপনি যেই হউন না আমার ফোন চাই না শুধু কিছু
ডাটা আমার চাই। প্লিজ হেল্প মি।
অপরপাশকে কথাই বলার সুযোগ দিলেন না সায়েম
সাহেব।
-ওকে ওকে আপনাকে আপনার ফোন দিব, আমি চোর
নই। আমি এখন ও ওই শপিং মলে ই আছি।
আপনি আসেন পাবেন।
-ওকে,জাস্ট অয়েট আ ফিউ মিনিটস।
কথাটা বলেই ফোন রাখলেন সায়েম সাহেব।
এদিকে ভদ্র মহিলা কথা শেষে ফোনটা লক
করতে গিয়েই চমকে উঠলেন মিসেস ইশিতা। কারন
স্ক্রীনের উপর যে ছবিটা ভাসছে সেটা ইশিতার
নিজেরই ছবি এবং সেটা আজ থেকে বার বছর
আগের ছবি। সাথে সাথেই ইশিতার ভেতরটা কেমন
যেন চমকে উঠলো। ফোন টা সায়েমের নয় তো?
সায়েম ইশিতার এক সময়ের খুব কাছের মানুষ
ছিল। কলেজ লাইফের পুরোটাই এক
সাথে কাটিয়েছিল দুজন। দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস
গুলো ছিল একই সময়ের। রাত দিন ফোনে কথা বলত
দুজন। সৃষ্টি কর্তার কোন একশাসনের
কারণে তারা আজ যোজন যোজন দুরে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ওই
ফোনে আবারো রিং হল।।
-আম্মু ওই যে আংকেল টা।
এই বলে দেখিয়ে দিল ইশিতার মেয়ে।
-এক্সকিউজ মি, আপনার ফোন
লোকটার মুখ দেখে ইশিতার মাথায় আকাশ
ভেংগে পড়ার অবস্থা। এতো সায়েম। একটু ও চেঞ্জ
হয় নি।
এ আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো? সায়েম সাহেব
আনমনে ভাবলেন। কিন্তু মুখে কিছুই বললেন না।
ফর্মালিটি দেখিয়ে ফোনটা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন
-এক্সকিউজ মি,
-আমাকে বলছেন?
-জ্বী
-আপনার নাম টা বলবেন?
-কেন?
-এমনি
-সায়েম
-তুমি আমাকে চিনতে পারোনি?
-হুম পেরেছি বাট কি লাভ চিনে?
-সেটাই,
-আর কিছু বলার আছে??
-তোমার ফোনে ওইটা কার ছবি?
-জানিনা
-তাহলে কেন দিয়েছ?
-ভাল্লাগে তাই
-কি করছ এখন?
-জব করি
-বিয়ে করেছ?
-না
-কেন?
-আজ থেকে বার বছর
আগে কাউকে কথা দিয়েছিলাম।
-ও ও
-কিন্তু আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে
-তোমার মেয়েটা অনেক সুন্দর।কি নাম রেখেছ?
-ইরা।
চমকে গেলেন সায়েম সাহেব। কারন নামটা তারই
দেয়া।। চোখের পানি আর আটকাতে পারলেন না।
রুদ্র মুখর দিনে তার চোখের
পানিটা ভাল্লাগছে না তবুও মন মানল না। ও
দিকে ইশিতাও কেদে দিল।। নিশ্চুপ দুজনেই।
দুজনেরই ইচ্ছে হচ্ছে বার বছর আগে ফিরে যেতে।
-মা চল, বাবা এসে গেছে।
ইরার কথা শুনেই দুজনের নিস্তব্ধতা কাটল।।
চলে যাচ্ছে ইশিতা। আবারো অনেক দিন পর
সায়েম সাহেব বুকের ভেতরর যন্ত্রণা হচ্ছে।
একটু একটু করে ইশিতা অদৃশ্য হয়ে গেল আর একটু একটু
করে সায়েম সাহেবের বুকের
যন্ত্রণা বাড়তে লাগল।
***
সকাল বেলা স্বামী অফিসে যাওয়ার পর পেপার
নিয়ে বেলকনীতে বসলেন ইশিতা। পেপারের
ভেতরের পাতায় লিখা ” অতিরিক্ত ধুমপান ও
মদ্যপানের ফলে যুবকের মৃত্যু ” ইনসেটে ছবি দেখল
সায়েম সাহেব। ইশিতা আর সইতে পারল না।
ফ্লাশ ব্যাক :
ইশিতাকে খুব ভালবাসতো সায়েম। এক দিন
না দেখে থাকতে পারতো না। ব্রেক আপএর পর
থেকেই সায়েম অন্ধকার জগতে পা বাড়ালো।
সে দিন শপিং মলে ইশিতা কে দেখার পর
সইতে না পেরে অসং্খ সিগারেট এবং ড্রিংক
করে হার্ট এর ব্যাথাটা বাড়িয়ে দিয়েছিল
এবং পরিনামে মৃত্যু।।
ইশিতার টিভি তে গান চলছে :
ভেংগে গেল আজ স্বপ্ন আমার
চারিদিকে নিরাশার অন্ধকার
কি নিয়ে বাঁচি আমি
ভালবাসা করে হাহাকার
অসমাপ্ত ভালবাসা, সমাপ্ত সায়েম।।
No comments:
Post a Comment