কিছু কিছু অভ্যাসে ওজন বাড়ে। যেসব অভ্যাসে ওজন বাড়ে —
আবেগপ্রবণতা:
আবেগপ্রবণতা ওজন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। যেমন ১৯৭২ সালে বিজ্ঞানীরা এক
গবেষণায় কিছু শিশুর লোভ দেখান যে, এখনই যারা খেতে চাও, তারা একটা মিঠাই
পাবে আর ১৫ মিনিট পর যারা খাবে, তারা দুটা মিঠাই পাবে। যেসব শিশু তাদের
আবেগকে আর সংবরণ করতে পারেনি, তারা পরবর্তী জীবনে বেশি সফলতা পায়নি এবং
তাদের ওজন বেড়ে গিয়েছিল। আর যারা ১৫ মিনিট দেরি করেছিল, তারা পরবর্তী
জীবনে অধিক সফল হয়েছিল। এমনকি তারা সঠিক মাপের শরীরের অধিকারী হয়েছিল।
আর্ট মার্কম্যান নামের আমেরিকার টেক্সাস ইউনিভার্সিটির এক বিজ্ঞানী বলেন,
দেরিতে বাসনা পূরণ হয়— এমন ব্যক্তিত্ব ওজন কমাতে সহায়ক। তিনি আরো বলেন,
আবেগপ্রবণতা থেকে যদি ওজন কমাতে চান, তবে অবশ্যই আপনাকে ছোটখাটো প্রলোভন
পরিত্যাগ করতে হবে, বাজে খাবার (জাংকফুড) ছাড়তে হবে। আর দেরিতে নাশতা
করলেও খাবার পাওয়া যাবে, এমন সুবিধা থাকে তবে একটু দেরিতে নাশতা করা ভালো,
এতে শরীর মেদমুক্ত হতে সহায়ক হয়। তবে খুব দেরিতে কিন্তু নয়।
নির্ভরশীলতা:
সময় বা বইয়ের নিয়ম তথা কোনো নির্দিষ্ট নিয়মের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিরা
অনেক সচেতন হয়। বিজ্ঞানী মার্কম্যান বলেন, এমন ব্যক্তিত্ব খাওয়া-দাওয়া
এবং শরীরের সুস্থতার দিকে যত্ন নিতে সহায়ক হয়। তবে খেয়াল করতে হবে, এ
নিয়মগুলো ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত কিনা। কেননা সব নিয়ম সব ব্যক্তির
ক্ষেত্রে সবসময় ইতিবাচক নাও হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে মার্ক
বিশেষ পরিকল্পনার বিরোধী। তিনি বলেন, সবকিছু বিবেচনায় পরিকল্পনা করতে হবে।
যেমন তিনি বলেন, যদি পরিকল্পনা থাকে প্রতিদিন সন্তানকে স্কুলে গাড়িতে করে
দিয়ে আসা অথচ একদিন দেখলেন সময় আছে, তখন নিয়ম ভেঙে সন্তানের সঙ্গে
আপনিও হাঁটুন। এতে শরীর ভালো থাকতে সহায়ক হবে।
দোদুল্যমানতা:
এমন মানুষকে জীবনে ভালো করতে চাইলে আবেগ পরিহার করতে হবে। আবেগপ্রবণ হয়ে
উত্তেজিত হওয়া যাবে না কোনো খুব খারাপ বা ভালো বিষয়ে। তাহলে জীবনের
লক্ষ্য স্থির করতে ঝামেলা পোহাতে হবে বলে মন্তব্য করেন গবেষক মার্কম্যান।
এমন মানুষ মোটা হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। কিছু মানুষ আছে, যারা আবেগপ্রবণ হয়েই
বেশি খায়। এদের ক্ষেত্রে মার্কম্যান পরামর্শ দেন, নিজের স্বাস্থ্যের
উত্থান-পতনের দিকে যত্নবান হতে হবে এবং জীবনে সব পদক্ষেপে স্বাস্থ্যকর
দিকটায় প্রাধান্য দিতে হবে।
নীরব স্বভাব:
নীরব প্রকৃতির মানুষের কম ওজন হয়। এরা আত্মকেন্দ্রিক হয়। চিন্তাশীল হয়
এবং ভেবেচিন্তে কাজ করে। আবেগপ্রবণতা এদের মাঝে থাকে না বললেই হয়। আর এ
বৈশিষ্ট্যগুলো তাকে নিজের পছন্দ বাছাইয়ে সহায়ক ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য
করেন গবেষক হেইডি হান্না। এরা ডায়েট কন্ট্রোল সহায়ক খাবার খাওয়ার
পরিকল্পনা করতে সক্ষম। তাই নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে যত্নবান হন। তবে
এক্ষেত্রে নীরব প্রকৃতির অনেক মানুষ বহিঃকেন্দ্রিকও হতে পারে, সেক্ষেত্রে
তারা নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকেন না।
দাওয়াতপ্রিয়:
দাওয়াতপ্রিয় লোকরা হতাশা কাটানোর জন্য নিয়মিত হয়ে মেজবান খেয়ে থাকেন
বলে গবেষণায় জানা যায়। তারা নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি চরম অবহেলা করেন।
খাবারের স্বাস্থ্যমানের দিকে তাদের খেয়াল থাকে না। তারা এনার্জি ড্রিংক,
অ্যালকোহল, উচ্চ ফ্যাট জাতীয়, উচ্চ ক্যালরিজাতীয় খাবার বেশি খান। বলতে
গেলে এ ব্যক্তিত্বের লোকরা মোটা হয়ে থাকেন। তবে আনন্দ করার জন্য
অনিয়মিতভাবে পার্টিতে যাওয়া ভিন্ন কথা। তার পরও গবেষক মার্কম্যান সব
ক্ষেত্রে ফ্যাটজাতীয় খাবার পরিহার করতে পরামর্শ দেন। এমনকি সামাজিকতা
রক্ষার্থে অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাট খাবার খেতে বাধ্য হতে হয়, এমন পরিস্থিতিও
এড়িয়ে চলার সুপারিশ করেন মার্কম্যান।
অমনোযোগী:
নিজের প্রতি অমনোযোগী, নিজেকে অবহেলা করেন এমন মানুষ অধিক পরিমাণে ভুল
করেন। আর এ ব্যক্তিত্বের মানুষ অনেক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়।
এমন ব্যক্তিরা অতিরিক্ত খাবার খান। মোটা হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন গবেষক
মার্কম্যান। এমন লোকদের সব কাজে নিজের ভালোটাকে বিবেচনায় নিয়ে নিজেকে
নিজের ভালো বন্ধু রূপে দেখার পরামর্শ দেন মার্কম্যান।
নিশাচর:
অধিক রাত যাপন মারাত্মক ক্ষতিরত্। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা
তাদের গবেষণায় যারা রাত ৪টা পর্যন্ত জেগে থাকেন, তারা অতিরিক্ত ৫৫০
ক্যালরি খান বলে পেয়েছেন। আর রাত জাগার কারণে যে খাবারগুলো তারা খান, তা
অধিকাংশই ফ্যাটজাতীয় খাবার। সেক্ষেত্রে দেখা যায় এমন ব্যক্তি মোটা হয়ে
থাকেন।
ঘুম থেকে জাগা:
অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন,
নিশাচরদের তুলনায় অনেক কম ওজনসম্পন্ন হন তারা। যদিও দুই রকম মানুষই একই
পরিমাণ ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় ঘুমায়, কিন্তু সকাল সকাল ওঠার কারণেই এ সুবিধা
লক্ষ করা যায়। বেশি ঘুম ভালো, তবে সেক্ষেত্রে তাড়াতাড়িই ঘুমাতে যেতে
হবে এবং সকাল সকাল উঠতে হবে। তওফিগ নামের জনৈক বিজ্ঞানী সুপারিশ করেন,
বয়স্কদের রাতে নিয়মিত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো ভালো।
আত্মকেন্দ্রিকতা:আত্মকেন্দ্রিক মানুষ নিজের জন্য ভালোটাকে সবক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়। যেটা তার শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করে। আর বহিঃকেন্দ্রিক মানুষ অন্যের ভালোর জন্য নিজের ভালোটাকে ত্যাগ করে। ফলে দেখা যাচ্ছে, শরীরের দিকে যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে আত্মকেন্দ্রিক মানুষই বেশি সচেতন হয়। তবে এ আত্মকেন্দ্রিকতার অতিরিক্ত চর্চা আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঝামেলা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার বিকল্প নেই।
No comments:
Post a Comment